স্টাফ রিপোর্টার:
জমিনে ধান পেঁকেছে ২০ দিন আগে। কিন্তু প্রতিপক্ষের বাধায় ওই পাঁকা ধান কাটতে পারছেন না হাকিম। ইতি মধ্যে ধান পেঁকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় হাকিম গত ২৫ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী এলাকার ৬ জন শ্রমিককে ধান কাটতে জমিতে পাঠান। শ্রমিকরা কিছু ধান কেটেছেনও। কিন্তু পরে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে জমি থেকে তাদের সরিয়ে দেয় কমর বাহিনী। ১ ডিসেম্বের আবার শ্রমিক নিয়ে জমিতে যান হাকিম। ওই দিনও শ্রমিক ও জমির মালিককে মারধর করে কমর বাহিনী। পরে হাকিম রাজনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২৯৯)। এরপ্রেক্ষিতে ৯ ডিসেম্বর পুলিশ জমিতে উপস্থিত হয়ে ধান কাঠায়। এই ঘটনার নায়ক মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বেতাহুঞ্জা গ্রামের ইউপি সদস্য কমরউদ্দিন ও তার বাহিনী। কমর বাহিনীর অত্যাচারে ৩ বছর ধরে অতিষ্ট উপজেলার বেতাহুঞ্জা গ্রামের ধন মিয়ার ছেলে হাকিমসহ ৪টি পরিবার। ওই ৪ পরিবারের ৩০ জন লোক দীর্ঘ ৪ বছর যাবত বাড়ি ঘর ছাড়া। ইউপি সদস্য কমর উদ্দিন এলাকায় তাদেরকে রেখেছেন এক ঘরি করে।
অনুসন্ধানে ও মামলা সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কমর উদ্দিন। কমর উদ্দিনের সাথে একই গ্রামরে ধন মিয়ার ছেলে হাকিম মিয়ার ২০১৬ সালে বাড়ির পশ্চিমের সীমানা নিয়ে তসির মিয়ার সাথে বিবাদ দেখা দেয়। পরবর্তীতে এলাকার উভয় পক্ষের স্থানীয় মোরব্বিরা বসে এটা সমাধান করেন। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য কমর উদ্দিন হামিক মিয়ার কাছে বড় অংকের টাকা দাবি করেন। একাধিকবার হাকিম কমর উদ্দিনকে সেলামিও দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে কমর উদ্দিন বড় অংকের টাকা চাইলে অপারগত প্রকাশ করেন হাকিম। টাকা না দেয়ায় তার বাহিনী দিয়ে পূর্বের বিরোধকৃত জায়গায় একটি খাল খনন করেন। পরবর্তীতে ভোক্তভোগী পরিবার আইনের আশ্রয় নেয়ায় কমর বাহিনী তাদেরকে এলাকায় সরকারি রাস্তা দিয়ে চলাচলে বাধা দেন। এক পর্যায়ে ভোক্তভোগী পরিবার এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়াসহ আরো কয়েক জনের সহযোগীতায় রাস্তায় মাঝে মধ্যে বের হতেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে সেলিম বাজার থেকে খরচ নিয়ে বাড়িতে আসার সময় কমর উদ্দিনের মিলের সামনে আসা মাত্রই কমর বাহিনীর লোক সেলিমের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওই ঘটনায় আহত সেলিমের ছোট ভাই শামীম মিয়া বাদী হয়ে রাজনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং জিআর ১৯৬/১৫)। কিছু দিন পর জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে শালিস বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়। বৈঠকে জেলা আ’লীগের সভাপতি নেছার আহমদ, সাবেক রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মিছবাউদ্দোজা ভেলাইসহ জেলা ও উপজেলার দুই শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের বিরোধের মিমাংসা হয় এবং স্ট্যাম্পে লিখিত আকারেও এটা রাখা হয়। যাতে আগামীতে কোনো পক্ষ ফের বিরোধে না জড়ায়। বিরোধ নিষ্পত্তির চার মাস পরে এলাকার লোকদের নিয়ে একটি শিরনীর উদ্যোগ নেন হাকিম। শিরনীর গরু কিনতে উপজেলার মুন্সিবাজারে যান হাকিম। দাম দরে না হওয়ায় গরু না কিনে বাড়িতে ফেরার পথে কমর বাহিনী তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় আব্দুল হাকিম, ছানা বেগম ও হারুন মিয়া গুরুত্বর আহত হন। এঘটনায় আব্দুল হাকিম বাদী হয়ে রাজনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ০৯/১৭)।
ইউপি সদস্য কমর উদ্দিনের ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাহিনী রয়েছে। এ অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে এলাকায় হত্যা ও গরু চুরির মামলা এবং নিরিহ মানুষের কাছে চাঁদা দাবীসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কমর উদ্দিন বলেন, আমি নয় পঞ্চায়েতের লোক তাদের ধান কাটতে দেয়নি। কি কারনে দীর্ঘ দিন ধরে হাকিমের সাথে আপনার বিরোধ এমন প্রশ্নের জবাবে কমর উদ্দিন বলেন, হাকিমের পরিবার সরকারি জায়গা দখল করে ভোগ করছিল। স্থানীয় ইউপি সদস্য হিসেবে এ কাজে বাঁধা দেয়ায় তাদের সাথে আমার বিরোধ দেখা দেয়।
ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস বলেন, শুনেছি কমর উদ্দিন মেম্বার হাকিমের জমির পাঁকা ধান কাঠতে দিচ্ছে না। তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ সমাধানের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করে জেলার গন্যমান্য ব্যক্তিরা ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ কারো কথা মানতে নারাজ।
রাজনগর থানার এসআই মেহেদী বলেন, অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছে। তবে গত ৯ ডিসেম্বর সরেজমিন এলাকায় যাওয়ার পরে হাকিমের লোকজন ধান কাঠতে পেরেছে। এ ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলছে।
রাজনগরে পুলিশ পাহারায় ধান কাটলেন ভোক্তভোগী
