হোসাইন আহমদ
সম্প্রতি আমরা দেখছি আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কোনো অপরাধ প্রকাশ পেলে প্রথমেই দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেন ওরা অনুপ্রেবেশকারী। এদের দায় সংগঠন নিবে না। অপরাধীদের কোনো দেল নেই। ইত্যাদি ইত্যাদি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত সবাই একই আওয়াজ তোলেন। যার কারনে অপরাধীরা অনেকটা পার পেয়ে যাচ্ছে। অথচ পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় অপরাধীদের সাথে মন্ত্রী, এমপি, কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। তাদের সাথেই দহরম মহরম সম্পর্ক। ওই সব নেতারাই তাদের বিভিন্ন কাজে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতেন। তাদের ব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েন। শূন্য থেকে কোটিপতি হন। নেতা কোথাও গেলে ওরাই সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে থাকত। ভাই ভাই বলে ডাকত। নেতারা অপরাধীদের নানা সময় আশ্রয় পশ্রয় দিতেন। অপরাধমূলক কাজে সহযোগীতা করতেন। এখান থেকেই তারা অপরাধ জগতের সাথে পরিচিত হয়। নেতাদের অবৈধ লেনদেন দেখে তাদেরও হাতে খড়ি হয়। তারাও কিছুটা শিখে। পর্যাক্রমে গড়ে তুলে গ্যাং। নিজেদের আলাদা বলয়। এক পর্যায়ে অবৈধ পন্থায় টাকা আয়ই হয়ে থাকে তাদের প্রধান ধান্ধা। রাতারাতি বড় লোকও হতে চায়। অনেকেই গাড়ি বাড়ির মালিকও হয়।
এদিকে যখন তারা বেপরোয়া হয়ে ধর্ষণ, খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, রাহাজানি, দখল, লুট ও সংঘর্ষ সহ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বেপরোয়া চলাফেরা করে। তখন তাদের আশ্রয় দাতারাই বলেন এরা অনুপ্রবেশকারী। এরা বিভিন্ন দল থেকে এসে সুবিধা নিচ্ছে। এদের দায় সংগঠন নিবে না। তখন দেশের সচেতন নাগরিকরা প্রশ্ন করেন ৮/১০, ৬/৭, ৪/৫ অথবা এর চেয়ে বেশি কিংবা কম সময় তাদের ব্যবহার করলেন কিন্তু একবারও তাদেরকে অনুপ্রেবেশকারী বললেন না। জামাই আদরে রাখলেন। তাদের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াতও খেলেন। নিজের গাড়িতে করে ঘুরালেন। সভা সমাবেশে তাদেরকে বক্তব্য দেয়ালেন। তাদের সাথে একাধিক ছবি নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোষ্ট দিলেন। সেও তার আইডিতে আপনাদের সাথে ছবি পোষ্ট দিলও। মুজিব কোর্ট পড়ে রাজপত কাপালো। কিন্তু তখন তাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলেননি। তাদেরকে সরিয়ে দেননি। সভা-সমাবেশে তাদের সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেননি। তাদেরকে এড়িয়ে চলার কথা বলেননি। কিন্তু যখন তারা কোনো অপরাধে ধরা পড়ল তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য তাদেরকে বললেন অনুপ্রবেশকারী। নূন্যতম বিবেকবান ব্যক্তিও এটা বুঝে। কি জন্য আপনারা মিডিয়াতে এ বক্তব্য দিচ্ছেন। নিজের সাদা পাঞ্জাবী বাঁচাতেই এমন বক্তব্য। ধরে নিলাম তারা অনুপ্রবেশকারী। তাহলে কেন আগে তাদেরকে বহিস্কার করেননি? তাদের শকোজ করেননি? কেন তাদের সাথে ১২/১০ বছর যাবত চলা ফেরা করেন? দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবীতে বসান? মুজিব সৈনিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিন।
সম্প্রতি সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মী স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর আওয়ামীলীগরে একাধিক নেতাকর্মীরা মিডিয়াতে বলছেন ওরা অনুপ্রবেশকার। এদের দায় সংগঠন নেবে না। প্রশ্ন হলো আগে কেন এদের অনুপ্রবেশকারী চিহ্নত করে সংগঠনি থেকে বহিষ্কার করলেন না? পুলিশের হাতে তাদের তুলে দেননি। দলীয়ভাবে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেননি। এ সংস্কৃতি শুধু সিলেট নয়। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও।
আওয়ামীলীগ কিংবা সমমনা দল গুলোর নেতা হতে হলে তেমন সাংগঠনিক দক্ষতা কিংবা যোগ্যতার প্রয়োজন হয়নি। টাকার মালিক হলেই যে কোনো পর্যায়ের পদবী কেনা যায়। সংসদেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যার কারনে আজ দলের এ অবস্থ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ সংস্কৃতি ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত ও জাসদ সহ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ দলে। গ্রুপ ভারি করতে সাংগঠনিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সবাই কর্মী কাছে টানছেন।
তবে আশার দিক হলো সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনা করলে এভাবে যে কেউ এসে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে পারতো না। তার কারনে দল কুলষিত হতো না। সংগঠনের নাম বিক্রি করে অবৈধ টাকা উপার্যন করতে পারতো না। বরং তারা সংগঠন ও দেশকে অনেক এগিয়ে নিতে পারতো। রাজনীতিক দলের সুসংগঠিত কর্মী বাহিনী ধারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
লেখকঃ সংবাদকর্মী