হোসাইান আহমদঃ
১ মার্চ সারা দেশের ন্যায় প্রথম বারের মতো মৌলভীবাজারেও জাতীয় বীমা দিবস পালন করা হবে। দিবসটিকে যথাযথভাবে পালন করার জন্য বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এদিকে মৌলভীবাজারে বীমা কোম্পানী নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে নৈতিবাচক ধারণা রয়েছে। জেলায় অবস্থানরত অধিকাংশ বীমা কোম্পানী গ্রাহকদের মেয়াদ উত্তির্ণ ও মৃত্যু দাবির টাকা দিতে নানা টাল বাহানা করছে। দীর্ঘ দিন যাবত গ্রাহকরা বীমা অফিসে হেটেও কুলকিনারা পাচ্ছেন না। এনিয়ে ইতি মধ্যে অনেক গ্রাহক কয়েকটি বীমা কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছেনা।
গ্রাহকরা বলেন, বীমা করানোর সময় কোম্পানির প্রতিনিধিরা গ্রাহকদের ধারে ধারে হেটে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বীমা করান। মেয়াদকালিন সময়ে গ্রাহকরা হাড়ভাঙ্গ পরিশ্রম করে কিস্তি পরিশোধ করেন। কিন্তু মেয়াদ শেষে ওই গ্রাহকরাই উল্টো বীমা কোম্পানীর অফিসে হাটতে হাটতে টাকা পাচ্ছেন না। অথচ পলিসি করানোর সময় বলা হয় মেয়াদ শেষে দিগুণ লাভসহ টাকা বীমা গ্রহীতার হাতে পৌঁছে দেয়া হবে। পলিসি চলাকালিন সময়ে গ্রাহক মারা গেলে নমিনীকেও বীমা অংকের পুরো টাকা পরিশোধ করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মৃত নাজমা বেগম হোমলেন্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের কমলগঞ্জ অফিসে একটি পলিসি করেন (পলিসি নং ১৯৫১৪৫৯৯০-৪)। ২০১৬ সালে মারা যান নাজমা। নাজমা মারা যাওয়ার ৩ বছর হলেও এখনও মৃত্যু দাবির টাকা পাননি নাজমার স্বামী মফিজ মিয়া (নমিনী)। এদিকে বীমা প্রতিনিধিরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফের মৃত নাজমার স্বামী মফিজ মিয়াকে ১ লক্ষ টাকার আরেকটি পলিসি করিয়েছেন। ওই পলিসি বাবত মফিজ মিয়া ইতি মধ্যে আরও ১০ হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করেছেন। এটা মরার উপর খারার ঘা’য় পরিণত হয়েছে। আবুল হাসেম নামের এক গ্রাহক বলেন, মৌলভীবাজার পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সে ২০১৭ সালে বীমার মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত টাকা পাইনি। অফিসে গেলে নানা টালবাহানা করেন কর্মকর্তারা। শাকিল নামের এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জন্ম তারিখ ও নামে ভুল দিয়ে পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ২০০৮ সালে আমার একটি বীমা করান। কিন্তু এখন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই ভুলের কারনে টাকা পাচ্ছি না। রাজনরগ উপজেলার আব্দুল হান্নান নামের এক প্রবাসী বীমা গ্রাহক বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বামীর টাকা পাননি। কমলগঞ্জ উপজেলার পিন্টু দেবনাথ নামের এক গ্রাহক বলেন, ২০১৩ সালে মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত টাকা পাননি। এভাবে বায়রা, পদ্মা ও গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর মৌলভীবাজার অফিসের মাধ্যমে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন।
আব্দুর রহমান নামের এক গ্রাহক বলেন, বীমা করার পূর্বে প্রতিনিধিরা একাধিকবার বাড়িতে গিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে পলিসি করান এবং দিগুন থেকে তিন গুন পর্যন্ত লাভের স্বপ্ন দেখান। কিন্তু বাস্তবে এগুলো প্রতিফলন হচ্ছেনা। পলিসি করার পর থেকে বীমা কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ধরা যায়নি। হাজী আহমদ আলী নামে এক সমাজকর্মী বলেন, ৪/৫ বীমা কোম্পানী ব্যতিত প্রত্যেকটিই গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে। বীমা আইন অনুযায়ী গ্রাহকদের কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বীমা কোম্পানীর মৌলভীবাজার এরিয়া ইনচার্জ বলেন, অধিকাংশ কোম্পানীর ফান্ডিং সমস্যার কারনে টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। পাশাপাশি পলিসি করার সময় গ্রাহকরা অজান্তে তথ্যগত অনেক ভুল করে থাকেন। যার কারনে মেয়াদ শেষে টাকা পেতে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন এবং মাঠ কর্মীরাও অনেক সময় গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়।
এবিষয়ে হোমলেন্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর মৌলভীবাজার অফিসের একাউন্টেন্ট জেনেবা বেগম বলেন, ২০১৮ সালে থেকে টাকা পরিশোধ করতে একটু দেরি হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে টাকা বিনিয়োগ করার কারনে চেক দেয়া যাচ্ছে না। মৃত্যু দাবির টাকা তো আলাদা ফান্ডে থাকার কথা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
জেলা বীমা কর্মকর্তা কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক আ স ম ছালেহ সুহেল বলেন, ইতিপূর্বে বীমায় অনেক নিয়ম বহির্ভুত কাজ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার বীমাকে একটি বাইন্ডিং এর ভীতরে নিয়ে আসতে চাচ্ছে। আশা করা যায় ২/৪ বছরের মধ্যে সকল সমস্যা সমাধান করে বীমা কোম্পানী গুলো মূলধারায় চলে আসবে।
মৌলভীবাজারে বীমার টাকা পেতে হয়রানি
