স্টাফ রিপোর্টার:
মৌলভীবাজারের ৪টি আসন পূনরায় ধরে রাখতে একাট্টা আ’লীগ। দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার আগে একাধিক গ্রুপ, উপগ্রুপ, কোন্দল ও প্রার্থী থাকলেও এখন সবাই একট্টা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকালে পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা আ’লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভার আহব্বান করা হয়। সভায় সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার আহব্বান জানান জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ। এবিষয়ে সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় আ’লীগের সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুর রহমান ও জেলা আ’লীগের সদস্য সাইফুর রহমান বাবুল মৌলভীবাজার প্রতিদিনকে বলেন, আ’লীগের বিভেদমান দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং অতিতের মান অবিমান ভুলে ব্যক্তি নয় নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা। এসময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানকে আহ্বায়ক ও মিছবাহুর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌলভীবাজার-১ আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার আ’লীগ থেকে বিজয়ী হন শাহাব উদ্দিন। বিগত ১০ বছরের আমলনামাকে পুঁজি করে পূনরায় নির্বাচিত হতে ফের মরিয়া হুইপ শাহাব উদ্দিন। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা বলছেন, দলীয় কর্মী ও স্বজনদের স্বৈরাচারিতার কারনে অনেকটা ঝুঁকি হবে ওই আসনে পূনরায় নির্বাচিত হওয়া। মৌলভীবাজার-২ আসনে ২০০৮ সালে মহাজোট থেকে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির নবাব আলী আব্বাস খান এবং ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মতিন। ওই আসনে একাদশ নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এম এম শাহীনকে। কিন্তু তার বিরোধী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। তিনি ধানের শীষ নিয়ে ওই আসনে নির্বাচন করবেন। হেভিওয়েট প্রার্থী সুলতান মনসুরকে পরাজিত করে নৌকাকে বিজয়ী করা এখানে অনেকটা কঠিন হবে নৌকার। মৌললভীবাজার-৩ আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। ২০১৫ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর সৈয়দ মহসিন আলী মারা যাওয়ার পরে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন সৈয়দ মহসিন আলী’র সহধর্মীনি সৈয়দা সায়রা মহসিন। এরপর থেকে নানা কারণে জেলা আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যা কিছুটা হলেও এখনও বৃদ্ধমান। কিন্তু পূনরায় দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন সায়রা। মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জেলা সভাপতি নেছার আহমদকে। এদিকে মৌলভীবাজার-৪ আসনে এ পর্যন্ত ৫ বার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুস শহিদ। নৌকার ঘাটি অধ্যূষিত এই আসনটি তিনি পূনরায় ধরে রাখতে চান। আসন ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তিনি মরিয়া। ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হলে এখানে পূনরায় নৌকাকে বিজয়ী করা সম্ভব বলে মন্তব্য করছেন নেতাকর্মীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালের পর থেকে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ছোট পরিসরে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সম্মেলনে নেছার আহম্মদকে সভাপতি ও মিছবাহুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর আত্মীয় করনের অভিযোগে উঠে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা আ’লীগের কোন্দল মাথাছাড়া দিয়ে উঠে এবং দুটি বলয় তৈরি হয়। প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর বাড়ির অনুসারীরা একটি বলয় তৈরি করে। এদিকে নেছার আহমদ এর নেতৃত্বে অপর একটি বলয় তৈরি হয়। দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত করার পূর্ব পর্যন্ত এ কোন্দল বৃদ্ধমান ছিল। যার কারনে উভয় গ্রুপ থেকে একাধিক নেতাকর্মী দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। কোন্দল ও গ্রুপিং এর প্রভাব পড়ে পুরো জেলায়। জেলা ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে উভয় বলয়ের নেতাকর্মীরা সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য একই সারিতে দাড়িয়েছেন।
এদিকে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া উপজেলা) আসনে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী বিকল্প ধারার এম এম শাহীনকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়। বর্তমান এমপি ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুল মতিনকে দলীয় মনোনয়ন না দেয়া তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। একারনে বুধবার সন্ধ্যায় দলীয় পদবী থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলা কমিটির নির্দেশে জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার আ’লীগের সকল নেতাকর্মীরা বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
মৌলভীবাজারের ৪টি আসন ধরে রাখতে একাট্টা আ’লীগ
