বিশেষ প্রতিনিধিঃ
প্রবাসী অধ্যূষিত মৌলভীবাজার জেলা। জেলার অধিকাংশেরই বেশি পরিবার প্রবাসীদের আয়ের উপর নির্ভরশীল। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য মিলে এ জেলার কয়েক লক্ষ শ্রমিক প্রবাসে রয়েছেন। অন্যান্য বছর ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য নিজের কষ্টার্জিত টাকা স্বজনদের কাছে পাঠাতেন তারা। নিজে নতুন জামা না কিনে কিংবা ভালো খাবার না খেয়েও মা-বাবার মুখে হাঁসি ফুটানোর জন্য টাকা পাঠাতেন। কিন্তু এবারের করোনা ভাইরাসের কারনে সংকটে পড়েছেন প্রবাসীরা। লকডাউনে থাকায় চাকুরি, জীবন-জীবিকা ও নিজের ভবিষৎ নিয়ে সংকটে পড়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা শংষ্কা করছেন এভাবে লকডাউন থাকলে প্রবাসীরা নিজের জীবন বাঁচানো অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির অন্যতম বড় নিয়ামক রেমিট্যান্স। কিন্তু প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে কভিড-১৯ মহামারীতে। একই সঙ্গে ডিসেম্বরের পর থেকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশে-দেশে লকডাউন ঘোষণা করায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত মৌলভীবাজারের শ্রমিকরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েন। এখনো তারা কর্মহীনই রয়েছেন। বিদেশের মাটিতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় সেখানে নিজেদের জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ফলে তারা আর আগের মতো রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। তাদের দুশ্চিন্তায় ভালো নয় তাদের পরিবারও। কখন কি সংবাদ আসে সেই আতংকে দিন কাটছে তাদের। ইতিমধ্যে জেলার অনেক প্রবাসী করোনায় মারা গেছেন আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন।
মৌলভীবাজার জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ২৭১ জন প্রবাসী জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বৈধ পথে চাকুরি নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। এদিকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ২ হাজার ৩৮০ জন শ্রমিক বৈধ পথে চাকুরি নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ট্রাভেলস ব্যবসায়ী ও রিক্রোটিং এজেন্সিং এর প্রতিনিধিরা বলছেন এর বাহিরেও লক্ষাধিক লোক স্টুডেন্ট ভিসায়, ভিজিট ভিসায় ও অবৈধভাবে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। এর বাহিরেও ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কয়েক হাজার লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ জিয়াবুল আলম বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর অনেক কম রেমিটেন্সে এসেছে। তবে যতটুকু বুঝতে পারছি প্রবাসীরা মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরটানে ঋণ করেও কিছু টাকা পাঠাচ্ছেন।
আমেরিকা প্রবাসী সৈয়দ গৌছুল ইসলাম বলেন, ২ মাস যাবত ঘর বন্দি। আয়ের কোনো রাস্তা নেই। জানিনা এরকম কতদিন থাকতে হবে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে পারছি না।
Post Views:
0