স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ৫৩ পদের মধ্যে ১৬ পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। যার কারণে জেলার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা চরম ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলাসহ নানা সংকট। এতো সমস্যা থাকার পরেও গেলও কয়েক দিন আগে দেশের শ্রেষ্ট হয়েছে ওই হাসপাতালটি। এনিয়ে কৌতুহলেরও শেষ নেয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাসপাতালটি শ্রেষ্ট হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে নানা মন্তব্য করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১১টায়ও টিকেট কাউন্টারে ভিড় জমে আছে। অনেক সময় টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরত কর্মচারীরা রোগীদের টিকেট না দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। চলে যান কোথায়? আসেন অনেক বিলম্ব করে। দীর্ঘ লাইন ধরে থাকেন রোগীরা। হাসপাতালের একটি কক্ষে এখনও ডাক্তার প্রবেশ করেননি। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক রোগী। বহি: বিভাগ (এমও) পুরুষ এর কনসালটেন্ট এখনও কোন রোগী দেখতে আসেননি এমনটাই জানালেন বাহিরে দাড়ানো রোগীরা। একই অবস্থা সার্জারী কনসালটেন্ট কক্ষেও। বাহিরে রোগীরা অপেক্ষা করছেন। ভিতরে ডাক্তার নেই্। এই দৃশ্য শুধু আজকের নয়। মাঝেমধ্যে অনেক ডাক্তারকেই কক্ষেই পাওয়া যায় না। তবে শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা গেল ডাক্তার রাউন্ড দিচ্ছেন।
সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা প্রদানের নিয়ম থাকলেও অনেক সময় সাড়ে ১২টায় গিয়েও ডাক্তার পাওয়া যায় না। কোনো সময় ডাক্তার আসতে আসতে সকাল ১০টা বাজে। এযেন শুধু জরুরি বিভাগে চলে পুরো হাসপাতাল। ওয়ার্ড ভিজিট ও রাউন্ড ফাঁকি দেন চিকিৎসকরা। দুপুর ১টার পর চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বিভিন্ন বিভাগে ডাক্তাররা দীর্ঘদিন ধরে কেউ ছুটিতে আবার কোন বিভাগের পদশূন্য। এত সংকট নিয়েই চলছে এই হাসপাতাল। এই জনবল ও সরঞ্জামের অভাব যেন নৈমিত্তিক ব্যাপার। রয়েছে দালালদের দৌরাত্য। বলা যায় হাসপাতালটি নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫৩টি পদের মধ্যে ১৬টি পদই শূন্য। ১জন সহকারি পরিচালক, এ্যানেসথেসিয়া, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজির ৪জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, চক্ষু বিভাগের ১জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডেন্টাল বিভাগের ১জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, প্যাথলজীর জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী সার্জন, প্যাথলজিষ্ট ও ১জন ইএমওসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোও শূন্য রয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা দুঘর এলাকার রাসেল আহমদ বলেন, “ব্যাথা নিয়ে এসেছি। টিকেট কেটে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও ডাক্তার আসেননি”। একই অবস্থা ভূজবল থেকে আসা কছরু মিয়া, হোসেন মিয়ার। তারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ডাক্তারের অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখনও দেখা পাননি।
সার্জারি ডাক্তারের কক্ষের সামনে দাঁড়ানো শাজান মিয়া বলেন, পায়ে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসার জন্য এত দূর থেকে কষ্ট করে বড় হাসপাতালে এসেও ডাক্তার পাইনি। তাদের প্রশ্ন এই বিড়ম্বনার অবসান কবে হবে?
এবিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ পার্থ সারথী দত্ত জানান, অনেক মাসে ডাক্তারের সংখ্যা কমে কখনও বাড়ে। কেউ জয়েন করেন আবার কেউ ছুটিতে যান। তবে দেশের অন্যান্য জেলা হাসপাতালের চেয়ে আমাদের হাসপাতাল অনেক ভাল চলছে। আমরা মোটামোটি সব বিভাগ সচল রাখতে পেরেছি।
হাসপাতালের সব কটি ভবন ও ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের নতুন চারতলা ভবনে লিফট আছে। নতুন ভবনে র্যাম্প না থাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মুমূর্ষু রোগী ওপরে ওঠাতে সমস্যায় পড়তে হয়। নতুন ভবনের পাঁচতলা ফাউন্ডেশন আছে। পঞ্চম তলা করা হলে আরো অধিকসংখ্যক রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালের পুরনো ভবনটি ১৯৮৪ সালের আগে নির্মিত। এ ভবনের স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। নতুন ভবনের শৌচাগারও প্রায় সময় থাকে অপরিচ্ছন্ন। অনেক সময় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।